ফরিদপুরের কয়েকটি উপজেলা সড়কের প্রায় জায়গায় বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও নির্মাণের রাস্তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পিচ-খোয়া উঠে গর্তের রূপ নিয়েছে। কোথাও সড়ক ধসে পড়েছে। এসব সড়ক অনেক আগে থেকেই সংস্কার করা দরকার হয়ে থাকলেও সংস্কার করা হয়নি।
সংস্কার না হওয়ায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী-বেড়ীরহাট-শিরগ্রাম সড়কটি ভ্যান, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকসহ ছোট বড় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। দুইটি রাস্তার ৮ কিলোমিটারের দীর্ঘ এই সড়কের অনেক স্থানে পিচ খোয়া নাই বললেই চলে। সড়কে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় হেলে দুলে ও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ছোট বড় যানবাহন। ফলে এই পথে যাত্রীদের দৈনন্দিন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ভাঙ্গা সড়ক সংলগ্ন বাড়ির লোকজনের পানির বালতি ও পাখা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারী জিসি হতে আলফাডাঙ্গার বেড়ীরহাট বাজার সড়কের অন্তত তিনশোরও বেশি স্থানে পিচ, খোয়া উঠে গেছে। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় সড়কের কিনারার অংশ ভেঙে পড়ে গেছে। ভ্যান, অটো রিকশা, মোটরযানে চড়ে যাত্রীরা জরুরি কোন কাজে একটু গতিতে চলাচল কতে গেলেই ঝাকুনিতে হেলাদুলে পড়তে হয়। জায়গায় জায়গায় স্লো হয়ে যান না চললে গাড়ী ভেঙ্গে যাওয়ারও ভয় থাকে। এমনকি অনেক স্থানে দূর্ঘটনাও ঘটছে নির্ত্তদিন। ধীরগতিতে চলছে অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্রাকের মতো ছোট বড় যানবাহন। এ ছাড়া বালুবোঝাই ভটভটি ও ট্রাক্টরও চলাচল করছে। এছাড়া বোয়ালমারী-শিরগ্রাম সড়কের কয়েকটি স্থানে রাস্তা ভেঙ্গে বারাশিয়া নদীতে পড়ে গেছে। ইট বালি দিয়ে কয়েকবার কিছুটা ঠিক করলেও ভাঙ্গা চোরা থাকায় বিভিন্ন সময় চলাচলকারীদের মারাত্বক সমস্যায় পড়তে হয়। তবে বৃষ্টির দিন হলে দূর্ভোগের আর সীমা থাকে না।
বোয়ালমারী-বেড়ীরহাট সড়কে পৌর শহরের শেষ প্রান্ত সুইচগেট, বাগুয়ান ব্রীজ, ফুলতলা, ভূমি অফিসের সামনে, নদেরচাঁদ হাইস্কুলের সামনে, নদেরচাঁদ বাজার, ভাটপাড়া সড়কের সামনে, ইটভাটার সামনে, হরিহরনগর কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে, সুইচগেটের সামনে, বাওড়ের সামনে, ভেন্নাতলা বাজার সামনে, কামার হেলা আমিনুর রহমানের বাড়ির সামনেসহ এলাকার অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে পড়ছে। অপরদিকে বোয়ালমারী-শিরগ্রাম সড়কের জালিয়াডাঙ্গা গ্রামের রনি মাস্টারের বাড়ি সামনে, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুচ মোল্যার বাড়ির সামনে, রজব আলী দোকানের সামনে, আব্দুল আজিজ এতিমখানা-মাদ্রাসার সামনে, গুনবহা মকলেসের বাড়ির সামনেসহ রাস্তা ভেঙ্গে বারাশিয়া নদীতে পড়ে গেছে।
রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বোয়ালমারী-বেড়ীরহাট এবং বোয়ালমারী-শিরগ্রাম সড়কটি গুনবহা ইউনিয়নের গুনবহা, বাগুয়ান, চাপলডাঙ্গা, দরিহরিহরনগর, নদেরচাঁদ ঘাট, উমরনগর, আখালীপাড়া, মুরাইল, নয়ানীপাড়া, আলফাডাঙ্গার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের চাদড়া, ভেন্নাতলা, চরনারানদিয়া, বেড়ীরহাট এবং বানা ইউনিয়নের বেলবানা, রুদ্রবানা, শিরগ্রাম, শিয়ালদীসহ দুইটি সড়কে দুই উপজেলার ৪০থেকে ৫০হাজার মানুষ বোয়ালমারী শহর ও ফরিদপুর জেলা শহরে যাওয়া আসার একমাত্র রাস্তা। প্রায় ৮ বছর আগে সড়কটি সংস্কার করা হয়েছিল। এরপর আর সড়কটি সংস্কার হয়নি। দিন দিন সড়কটির অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সড়কের বেশির ভাগ অংশে পিচ ও খোয়া উঠে খানাখন্দে ভরে গেছে। এ রাস্তায় বৃষ্টির দিন এলে মানুষের দূর্ভোগের সীমা থাকে না।
গুনবহা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মঞ্জুর হোসেন বলেন, দিন দিন সড়কটির অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সড়কটি সংস্কার না হলে পশ্চিম বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গার মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যাবে। পুরো সড়কটি ভাঙাচোরা হওয়ায় যানবাহন যেতে চায় না। গেলেও ভাড়া দ্বিগুন গুনতে হয়।
হরিহরনগর এলাকার বাসিন্দা দলিল লেখক লিটন শেখ বলেন, দিনের বেলায় ছাড়া রাত হলে আমি বাড়িতে যাই না। ভয় করে, কোন সময় কোন গর্তে পড়ে যায়! নতুন মোটর সাইকেল বা কেউ যদি ভ্যান এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন, তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে ঝনঝনানি শুরু হয়ে যাবে। শুধু বোয়ালমারী-বেড়িরহাট সড়কে ২৫০ থেকে ৩০০ খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। গত ৭ বছরের হলো না সংস্কার রাস্তাটির! আব্দুর রহমান এমপি হইছে, তাহলে হইতো এই ৫ বছরে রাস্তাটি হতে পারে।
ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক আব্দুল মান্নান বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে এ রাস্তা ভ্যান চালায় আমি। ৬-৭ বছর সড়কটি ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। আগে এই সড়ক দিয়ে বোয়ালমারী থেকে বেড়ীরহাট যেতে সময় লাগত ১৫-২৫- মিনিট। সড়কটি খারাপ থাকায় এখন লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। এছাড়া বড় বড় গর্তে পড়ে গাড়ি উল্টেও যায়। জরুরি কাজের জন্য একটু বেগে চালাতে গেলেই গাড়ীর অনেক সময় যন্ত্রপাতি ভেঙে যায়। ৫০০ টাকা আয় করতে গিয়ে ২০০০ টাকাও গুনাগারি দিতে হয়।
আলফাডাঙ্গার পাচুড়িয়া ইউনিয়নের চাদড়া গ্রামের বাসিন্দা সীমান্ত সাহা বলেন, আমি প্রতিনিয়ত এ রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করি। রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অশান্তির মধ্যে আছি। দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার চাই কর্তৃপক্ষের কাছে।
পথচারী চরনারানদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমিন সুলতানা বলেন, বাড়ি আলফাডাঙ্গা উপজেলার মধ্যে পড়লেও যাতায়াত বেশি বোয়ালমারী শহরে। রাস্তা ভাঙ্গা থাকায় যেখানে আমাদের বাড়ি যোগিবরাট থেকে বোয়ালমারী সদরে আসতে সময় লাগতো ১৫-২০ মিনিট সেখানে সময় লাগে ১ ঘন্টারও বেশি।
নদেরচাঁদ বাজারের চায়ের দোকানদার আবু জাফর (৪৮) বলেন, পাকা রাস্তার পাশে এতো ধুলাবালু খেতে হয়। গত ৬ বছর ধরে দেখতেছি। পাকা রাস্তা পিচ তো দূরের কথা খোয়া উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। পথচারী উমরনগর গ্রামের আক্তার হোসেন (৭১) বলেন, রাস্তাটি আমি গত সাত-আট বছর ধরে ভাঙ্গা চোরা দেখতেছি। এমনিই মাজায় ব্যাথা, রাস্তা দিয়ে ভ্যানগাড়িতে উঠলে সোজা হয়ে দাড়ানোই কঠিন হয়ে যায়। না পারলে আর রাস্তা দিয়ে বাজারে যাই না! পথচারী আব্দুল হক বিশ্বাস বলেন, এই রাস্তা দিয়ে ভালো মানুষই চলতে পারে না। আর তোন অসুস্থ্য মানুষ চলতে গেলে আরো অসুস্থ্য হয়ে পড়বে।
বোয়ালমারী-বেড়ীরহাট সড়কে মোটরসাইকেল চালক চরনারানদিয়া গ্রামের মারুফ সরদার বলেন, বিগত ৭-৮ বছর ধরে বোয়ালমারী-ফরিদপুর যাতায়াত করি। রাস্তাটি সংস্কার না করায় আমাদের অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমার মোটরসাইকেলের মাঠঘাটটাও ভেঙ্গে গেছে এবং ডাম্পারের ওয়েলসেল দুই-এক সপ্তাহ পরপরই পাল্টানো লাগে। একমাত্র রাস্তা ভাঙ্গার কারণে আমরা এসব সমস্যা ভুগছি। ছোট রাস্তা হলেও এ সড়কে গাড়ীর অনেক চাপ থাকে দিনরাত।
দরিহরিহর নগর গ্রামের বাসিন্দা রহিমা বেগম (৬০) বলেন, বাড়ির সাথেই রাস্তা হওয়ায় সব সময় পানির বালতি, পাখা ও গামছা নিয়ে রেডি থাকতে হয়। রাস্তা ভেঙ্গে গর্ত হয়ে যাওয়ায় কোন সময় ভ্যান, অটো, মোটরসাইকেল উল্টে পড়ে খালের মধ্যে চলে যায়। এজন্য সব সময় সজাগ থাকতে হয় কোন সময় কোন দূর্ঘটনা ঘটে! এ রাস্তা দিয়ে অসুস্থ্য মানুষ যাতায়াত করতে গেলে তারা আরো অসুস্থ্য হয়ে যায়।
বোয়ালমারী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) পূর্ণেন্দু সাহা বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন কয়েক মাস যোগদান করেছি মাত্র। বোয়ালমারী-বেড়িরহাট জিসি সড়ক ফরিদপুর-রাজবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্পে প্রশস্তকরণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে প্লানিং কমিশনে সড়কটি পাশের অপেক্ষায় আছে। ‘সড়কটি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছিল বলে ধারণা করছি। আর বোয়ালমারী-শিরগ্রাম জিসি সড়ক আগামী অর্থবছরের সংস্কারের তালিকায় পাঠানো হবে।