আমরা দিনকে দিন উন্নত হচ্ছি। রূপ বদলেছে, অর্থনীতিতে সমৃদ্ধশালী হচ্ছি, কিন্তু আমাদের ভেতরটা এখনও বদলায়নি। আমরা এখনও সভ্য হতে পারিনি। কারণ কোনো সভ্য সমাজের সন্তান ৫০ বছর বয়সী মাকে শাল-গজারির বনে ফেলে দিতে পারে না। আর যে সাংবাদিকরা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সম্মুখে লড়ছেন তাদের ঘরে তালা ঝুলানোও সভ্যতার প্রতিচ্ছবি না। এ বড্ড অসভ্য, বর্বর এবং নিন্দনীয় বটে।
সাগর-রুনির উদাহরণ আমি না হয় নাই বা দিলাম, আপনারা কি মাত্র কদিন আগে ভোলায় সাংবাদিক সাগর চৌধুরীর ওপর হামলার কথা ভুলে গিয়েছেন? বোরহানউদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বড় মানিকা ইউপি চেয়ারম্যান জসিম হায়দারের ছেলে নাবিলের বর্বরতার শিকার হতে হয়েছিলো তাকে, অপরাধ ছিলো ক্রাণের চাল চুরির প্রতিবাদ করা। এটা কোনো সভ্য সমাজের চিত্র হতে পারে না।
রেনুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো, মনে পড়ে? না, এ কোনো সভ্য জাতি করেনি। করেছে অসভ্যরা কীটেরা, মানুষ রূপী কীটেরা ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের সমাজের আনাচে-কানাচে। কখনো এরা বাড়ি মালিক, কখনো বা চেয়ারম্যানের ছেলে, কখনো স্কুল বা মাদ্রাসার শিক্ষক, কখনো বা নয়ন বন্ড রূপে এরা প্রকাশ্যে আসে। এরা বার বার সমাজের নিরীহ মানুষের ওপর আঘাত করে। সমাজে এরা অসভ্যদের রাজত্ব কায়েম করতে চায়।
আজকের ঘটনাটা এমনই এক বাড়িওয়ালার যার নিজেরও ছেলে রয়েছে, পরিবার রয়েছে কিন্তু তিনি অন্য পরিবারের কষ্ট বুঝতে পারেন নাই। তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখেন। খেতে দেন না। বলছিলাম বাসাবোর রাজারবাগের বাগপাড়ার দরবার গলির ২ নম্বর বাসার বাড়িওয়ালা খাইরুলের কথা।
নাজমুল হুদা। তরুণ সাংবাদিক। কাজ করেন বেসরকারি একটি রেডিওতে। পড়াশোনা এখনও শেষ হয়নি তার। পড়ছেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে। কর্মসূত্রে এপ্রিল মাসে ছিলেন রাজধানীর গুলশান এলাকায়। রুমের দু’জনের করোনা পজিটিভ আসার পর তারও কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। এরপর তিনি ফিরে যান পরিবারের কাছে, বাসাবোতে। সেখানে তিনি তার মা ও বোনকে অন্য আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে থাকতে চান হোম কোয়ারেন্টিনে। নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন আইইডিসিআরের সাথে, স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ নিচ্ছেন। কিন্তু বাড়ির মালিক খাইরুল কোনোভাবেই এ ঘটনা মেনে নিতে পারেন না। তিনি নানানভাবে হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করেন নাজমুলকে। কিছুতেই কাজ না হওয়ায় রোববার এ সাংবাদিকের ঘরে তালা মারেন খাইরুল।
এরপর স্থানীয় কাউন্সিলর শ্রী চিত্তরঞ্জন দাস ও সবুজবাগ থানার ওসি মাহবুবুর রহমানের সহায়তায় ঘরের তালা খুলে দেয়া হয়। পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না বলেও মুচলেকা নেয়া হয়।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে